20 November 2008

ওয়াহিদ রুম্মন’ এর কলাম

ভের্খ্‌‌নি আর নিঝ্‌নি নিদেলিয়া’এর (রাশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সপ্তাহ কে ২ ভাগে ভাগ করে পড়ানো হয়। ভেরখ্‌নি নিদেলিয়া-উপরের সপ্তাহ, নিঝ্‌নি নিদেলিয়া-নিচের সপ্তাহ) ফাঁকে পরে জীবনটাই ব্যারা-ছ্যাড়া। এরমধ্যে আবার গত সপ্তাহ থেকে কম্পিউটার নষ্ট। দেশ থেকে পাঠানো পাইরেটেড এক্স. পি. ইন্সটল করতে গিয়ে কম্পিউটারের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। ফ্ল্যাশ ড্রাইভের যুগে বুটেবল ফ্লপিডিস্ক খুঁজতে শেষে ডিস্ক কোম্পানীতে যেতে হয় কি-না কে জানে। কিছু বিদেশী বন্ধুর আশ্বাসে এখনো অপেক্ষায় আছি। মনে হচ্ছে তারাই আমার কম্পিউটার ঠিক করে দিতে পারবে। দোকানেও নিয়ে যেতে পারতাম, তবে কর্মহীন বিদেশের ছাত্রজীবনে মাঝে মাঝে এক হাজার রুবল খরচ করতেও চিন্তা করতে হয়। তার উপর আবার বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ঠিক মড়ার উপর খাড়ার ঘা।

এখানে সপ্তাহের প্রথম দিন শুরু হয় সোমবার থেকে। সকাল ৯ টায় ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ থাকলে আমাকে ভোর ৬ টায় উঠতে হয়। থাকি এপার্টমেন্ট সিস্টেম হোস্টেলে। কীচেন, বাথরুম এবং টয়লেট কম্যুনাল বলে লাইনের অপেক্ষায় থাকতে চাইনা। আজও তেমন দিন। ভেবেছিলাম দিনের সেকেন্ড হাফে কিছু কাজ সারতে এক বন্ধুকে নিয়ে এক সরকারি অফিসে যাব। তাকে সাত সকালে ফোন করতেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর “ আজ তো প্রাজ্‌দ্‌নিক (উৎসব), সব কিছু বন্ধ”। ততক্ষনে আমি সকাল ৯ টার ক্লাশ ধরার জন্য প্রায় তৈরী। ওর কথা ভেরীফাই করতে আরও দুই যায়গায় ফোন দিতেও একই রিপ্লাই। এবং জানা গেল আজকে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট ক্লাশের টিচারই না-কি ক্লাশ করাবেন না। কী আর করা? শেষে নতুন করে দিনের প্ল্যান তৈরি।

এর মধ্যেই আর এক বন্ধুবর এর SMS ফ্রম কোলকাতা। “কেমন আছিস? খুব মিস করছি তোদের। সব খবর ভাল তো”? আরে, তুই তো সবই জানিস। ৫ বছর এখানে থাকার পর সবে এক মাস হলো ব্যাক টু দ্যা প্যাভেলিয়ন। বরং তোর খবর বল? কেমন আছিস? নিজে রান্না করে খেতে হচ্ছে না এই তো ঢের। বেশ কয়েক দিন আগে যখন দেশে মায়ের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল, তখন মস্কো’তে জিনিস পাতির আকাশ ছোয়া দামের কথা বলছিলাম। সূর্যমুখি ৯০০ এম.এল যে তেলের দাম ৩৮ রুবল ছিল তা এখন ৫০ এর ও বেশি। শুনে মা হেসে বললেন “বাবা তুমি এত চিন্তা কর? এত বৈষয়িক হয়েছ”?

সত্যিই দেশে থাকতে এগুলো কখনো মাথায় আসেনি। এমনকি মস্কো’তেও দোকানী টাকা ফেরতের সময় খুচরো কয়েন দিলে আগে অন্যান্য রাশিয়ানদের মতো সেগুলো কাউন্টারেই ফেলে আসতাম। এখন প্রত্যেকটা কোপেক (১০০ কোপেক= ১ রুবল) গুনে নিচ্ছি। শুধু আমি না, আমার আশে পাশের প্রায় সবাই। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ঠেলায় আমরা বাবাজীর নাম জপছি।


শেয়ার করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More