28 August 2011

নববর্ষ ১৪১৪ ' মস্কো

প্রথম প্রকাশঃ ১৫/৪/২০০৭


মহা সাড়ম্বরে মস্কো' তে বাংলাদেশী ছাত্রসংগঠন গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় রাশিয়া 'র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলা বর্ষবরণ ১৪১৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ তঃক্লাব মিলনায়তনে তিনঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিরা ছিলেন ডেপুটি চীফ অফ মিশন বাংলাদেশ রেজিনা আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-রেক্টর আ.ভ . এরমাকভ, চেম্বার অফ কমার্স রাশিয়া এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আরজু মিয়া, বাংলাদেশী ছাত্রসংগঠনের সভাপতি কাজী শিবলী সুমন এবং এশিয়ান ছাত্রসংগঠনের সভাপতি বিপ্লব চন্দ্র সাহা।




কোরান তেলয়াত, জাতীয় সঙ্গীত এবং বিশেষ অতিথিদের ভাষনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবাই পুরোনো বছরের গ্লানি ভুলে যেয়ে নতুন বছরে নব উদ্দীপনায় সামনে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান। বাংলায় শুভ নববর্ষ, ইংরেজীতে হ্যাপী নিউ ইয়ার এবং রাশিয়ান ভাষায় স্নোভিম্‌ গোদাম্‌ বলে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অভ্যাগত বিদেশি অতিথিবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝার সুবিধার্থে ডেপুটি চীফ অফ মিশন বাংলাদেশ রেজিনা আহমেদের ভাষন রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে পাঠ করা হয়।

বাংলাদেশী এবং রাশিয়ান ভাষায় চমৎকার অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় শুরু হয় মূল পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজেশ, জুয়েল এবং মাহবুবের বাংলা গানের পাশাপাশি বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশিত হিন্দী, মারাঠী, পাঞ্জাবী, আরবী, ল্যাটিন, রাশিয়ান এবং ইংরেজী নাচ আর গানে মেতে ওঠে মিলনায়তন। মূহুর্মূহু করতালির মাধ্যমে প্রকাশিত হয় অতিথিদের উচ্ছ্বাস। এটি বাঙ্গালী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী অতিথি এবং ছাত্র-ছাত্রী । মিলনায়তনে উপস্থিত সবার জন্য আপ্যায়নের ব্যাবস্থা ছিল অনুষ্ঠানের বাড়তি চমক।

রুশ ভাষায় পড়াশুনা

প্রথম প্রকাশঃ ২৩/৩/২০০৭


এই সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে আমাদের দুই দিন রুশ ভাষা ক্লাশ হচ্ছে। যদিও সব সাবজেক্ট রুশ ভাষাতেই পড়তে হয়, তবুও এই দুইদিন ক্লাশে যেতে সব বিদেশী ছাত্রদের খুব অনিহা। কারন বোধহয় দুর্বোধ্য রুশ ব্যাকরন। দেশে যখন বাংলা ব্যাকরন পড়তাম, ভাবতাম এরচেয়ে কঠিন কোন বিষয় বুঝি আর নেই। সেই কারনে সেটা ভাল করে শেখা হয়নি। আমার লেখায় অসংখ্য ভুলে ভরা বানান দেখে সেটা সহজেই অনুমেয়। এখন ভিনদেশী ব্যাকরন শিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে বরং ভাল করে বাংলা ব্যাকরন শেখাটাই উচিৎ ছিল।


তবে ইউনিভার্সিটি চেষ্টা করে বিদেশি স্টুডেন্টদের যতটা সম্ভব আকর্ষনীয় ভাবে তাদের ভাষা শেখানোর। তাই মাঝে মাঝে আমাদের সভিয়েত আমলের সিনেমা দেখান হয়। এবং শেষে ব্যাখ্যা করতে হয় সিনেমার বিষয়। এখন আমরা বিখ্যাত রুশ লেখক “চেখভ্‌” এর “দামা স্‌ সাবাচ্‌কেয়’’ নামের একটি বই পড়ছি। এই বইটির নামের বাংলায় অনুবাদ দাঁড়ায় “কুকুরসহ ভদ্রমহিলা”। এই গল্পের প্রধান চরিত্র একজন ভদ্রমহিলা যার ছোট্ট একটি সাদা কুকুর আছে। বইটি শেষ করে আমরা এই সিনেমা দেখব। “চেখভ্‌” এর গল্প লেখার স্টাইল খুবই আকর্ষনীয়। এত পুরোনো লেখক হলেও তাঁর অত্যাধুনিক মনমানসিকতা অবাক করার মত। রুশ ভাষায় রুশ সাহিত্য পড়ার মজাই আলাদা। অনুবাদ করে কোনো ভাষার সাহিত্যরই আসল স্বাদ পাওয়া যায়না।

“মিক্সড্‌ কালচার, মিক্সড্‌ ফুড”

প্রথম প্রকাশঃ ২১/৩/২০০৭

আমি যে হোস্টেলে থাকি, সেটা আমাদের ইউনিভার্সিটির অন্যান্য হোস্টেলের মত না। তার আগে বলে নেই আমাদের সাধারন হোস্টেলগুলোর প্রত্যেকটির মেইন বিল্ডিং ৫ তালা করে। আর বাঁকী গুলো ১৮ তালা করে। সেগুলোর মধ্যে আবার আমার হোস্টেলটা আবার ভি,আই,পি টাইপের। অর্থাৎ এপার্টমেন্ট সিস্টেম। আমার এপার্টমেন্টে চারটি রুম। তার একটাতে থাকি আমি আর বাঁকীগুলোতে থাকে চায়নীজ, জ্যামাইকা আর কলম্বিয়ার ছেলেরা। আমাদের সবকিছুই আলাদা হলেও কিচেন একটাই। তাই গত তিন বৎসর ধরে একসাথে রান্না করতে করতে তাদের খাবার সম্বন্ধে আমার ভাল ধারনা হয়ে গেছে। এপার্টমেন্টে ঢুকে গন্ধ শুকেই বুঝতে পারি কোনদেশী রান্না হচ্ছে।


দুই রুমে চারজন চায়নীজ স্টুডেন্ট থাকে তাই তাদের প্রসঙ্গে আগে লিখছি। তারা আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশীদের মতই ভাত খায়। সেই সংগে ন্যুডলস্‌, মাংস, সব্জী আর মাঝে মাঝে মাছ। তাদের রান্নার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। খাবার আমাদের মত অতটা সিদ্ধ করেনা। প্রথমে ফ্রাইংপ্যানে তেল খুব গরম করে তাতে ছোট করে কাটা মাংসের টুকরো ছেড়ে ভেজে নেয়। তাতে সামান্য পানি দিয়ে পাঁচ-ছয় মিনিট গরম করে নেয়। তারপর সেই গরম পানিতে সব্জি, লবন আর মিক্সড্‌ মশল্লার গুড়ো দিয়ে আরো পাঁচ মিনিট সিদ্ধ হলেই তাদের রান্না শেষ। তাদের সেই মিক্সড্‌ তরকারি ভাত দিয়ে কিংবা সেই গরম তরকারিতেই ন্যুডলস্‌ ছেড়ে স্যুপের মত করে খায়। আমি নিজের খাবার নিজেই রান্না করি বা কখনও ফ্রেন্ডস্‌রা মিলে একসাথে। মোটামুটি একই উপকরন দিয়ে যদি আমি/আমরা আর চায়নীজরা রান্না শুরু করি, তাহলে আমাদের রান্না অর্ধেক হতে হতে তারা খাওয়া শেষ করে থালা-বাসন ধুয়ে সব কমপ্লিট্‌। বাংলাদেশে যেসব চিয়নীজ হটেল আছে, সেগুলোর খাবারের থেকে এই খাবারের স্বাদ একেবারেই আলাদা। অরিজিনাল চায়নীজ খাবার। আমি তাদের খাবার খেয়ে দেখেছি, স্বাদ আমাদের থেকে সামান্য আলাদা হলেও খারাপ না। এককথায় সুস্বাদু।

এবার আসি জ্যামাইকান্‌দের খাবারের কথায়। তারাও প্রায় সবসময় ভাত খায়। প্লাস্‌ মাংস। আমি তাদেরকে খুব কম সময় মাছ খেতে দেখেছি। রান্না প্রায় আমাদের মতই। তবে খুব ঝাল খায়। মাঝে মাঝে তারা মাংসের সাথে সিদ্ধ আলু আর সিদ্ধ আটা/ময়দা খায়। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছি, তারা প্রথমে আটা/ময়দাকে পানি দিয়ে মাখিয়ে মন্ড তৈরী করে। আমরা রুটি বানানোর জন্য যেমনটি করি তেমন। তারপর হাত দিয়ে গোল গোল ছোটো টুকরো করে নেয়। সেই ছোটো টুকরোগুলোকে চ্যাপ্টা করে টগবগে গরম পানিতে ছেড়ে প্রায় একঘন্টা ধরে সিদ্ধ করে। তাদের কাছথেকে শুনেছি যে, এই খাবারে নাকি প্রচুর এনার্জি।

কলম্বিয়ানদের খাবারও প্রায় আমাদের মতই। ভাত আর মাংস। তবে তারা প্রায় সব তরকারীতেই লাল বা সাদা বীন (এক জাতীয় শিমের বিচী) ব্যাবহার করে।

এবার আসি আমার খাবারে। আমি “না ঘরকা না ঘাটকা”। ঐসব মিক্সড্‌ কালচারের খাবার দেখে আমি একধরনের মিক্সড্‌ খাবার তৈরী করি। যদিও ঐ খাবারের প্রায় অনেকটাই বাংলাদেশী খাবারের মত। মেন্যুতে আছে ভাত, মাংস, মাছ আর সব্জী। আর আমার সবচেয়ে খানদানী খাবার হলো আলুভর্তা আর ডিমভাজা। আলু ছোট কুচিকুচি করে কেটে, বেশী করে পেয়াজ আর কাঁচা মরিচ ফালি করে কেটে দিয়ে কেচ্‌কী মাছের চচ্‌চরি খেতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু এই রাশিয়াতে এখনও সেই সুযোগ আসেনি। হয়তো খুব শীঘ্রই আসবে। সেই সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম।
[বর্তমান আপডেটঃ সুযোগ এসেছে কিন্তু খুব কম। :)]

“উই লাভ বাংলাদেশ, উই লাভ ক্রিকেট”

প্রথম প্রকাশঃ ৯/৪/২০০৭ দৈনিক যুগান্তর।






পড়াশুনা এবং বসবাসের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বাংলাদেশীরা অবস্হান করছেন। তেমনি প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমানের রাশিয়ান ফেডারেশনেও বসবাস করছেন বেশ কিছু বাংলাদেশী। এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখাই বেশী।

বাংলাদেশ থেকে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশই পড়ছেন রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত "রাশিয়ার গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্দ্যালয়ে"। অন্যান্য ইউনিভার্সিটি এবং স্টেটে তুলনামূলক কম বাংলাদেশীদের অবস্হানের কারনে এই ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশী কম্যূনিটির প্রাণকেন্দ্র ধরা হয়।

ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে অন্যান্য দিনের মতই 17'ই মার্চের সকাল শুরু হলেও প্রতিটি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ। আমাদের দেশে প্রতিটি ক্রিকেট দলভূক্ত দেশের আলাদা সমর্থক থাকলেও মস্কোর প্রবাসী বাংলাদেশীদের ছিল একটাই ফেভারেট দল "বাংলাদেশ"।

যেহেতু রাশিয়ায় ক্রিকেট খেলা তেমন জনপ্রিয় নয়, সেহেতু স্হানীয় টিভি চ্যানেলের উপর ভরসা না করে অধিকাংশই খেলা উপভোগ কোরেন স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং ইন্টারনেটে। খেলা চলাকালীন সময়ে যারা টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসার সুযোগ পাননি, তারা মোবাইল ফোনে শুনে নিচ্ছিলেন "স্কোর"। বাংলাদেশী "টাইগার"দের প্রতিটি রান এবং ভারতের প্রতিটি উইকেটের পতনে বাংলাদেশী ছাত্রদের উল্লাসে কেঁপে উঠছিল ইউনিভার্সিটির আবাসিক হোস্টেলগুলো। অন্যান্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ক্রিকেট বোঝেন এবং ভালবাসেন, তারাও যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশীদের আনন্দে।


বাংলাদেশ জেতার প্রায় সংগে সংগেই ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন "মিকলুখো মাকলায়া" রাস্তায় বিজয় মিছিলে নেমে পরে প্রতিটি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী। বাইরে তখন মাত্র এক (1') ডিগ্রী তাপমাত্রা। মধ্যরাতে লাল সবুজের পতাকা এবং ঊল্লাসধ্বণীতে মুখরিত হয় পূরো উইনিভার্সিটি এলাকা। ক্যাম্পাসে বসবাসরত উৎসূক রাশিয়ান এবং বিদেশীরাও জেনে নিচ্ছিলেন আনন্দের কারন। বাংলাদেশীদের হৃদয়ের উষ্ণতায় তারাও যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিজয় মিছিলে। আর সবার মুখে ছিল একটাই স্লোগান: "উই লাভ বাংলাদেশ, উই লাভ ক্রিকেট"।

শেয়ার করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More