প্রথম প্রকাশঃ ২১/৩/২০০৭
আমি যে হোস্টেলে থাকি, সেটা আমাদের ইউনিভার্সিটির অন্যান্য হোস্টেলের মত না। তার আগে বলে নেই আমাদের সাধারন হোস্টেলগুলোর প্রত্যেকটির মেইন বিল্ডিং ৫ তালা করে। আর বাঁকী গুলো ১৮ তালা করে। সেগুলোর মধ্যে আবার আমার হোস্টেলটা আবার ভি,আই,পি টাইপের। অর্থাৎ এপার্টমেন্ট সিস্টেম। আমার এপার্টমেন্টে চারটি রুম। তার একটাতে থাকি আমি আর বাঁকীগুলোতে থাকে চায়নীজ, জ্যামাইকা আর কলম্বিয়ার ছেলেরা। আমাদের সবকিছুই আলাদা হলেও কিচেন একটাই। তাই গত তিন বৎসর ধরে একসাথে রান্না করতে করতে তাদের খাবার সম্বন্ধে আমার ভাল ধারনা হয়ে গেছে। এপার্টমেন্টে ঢুকে গন্ধ শুকেই বুঝতে পারি কোনদেশী রান্না হচ্ছে।
দুই রুমে চারজন চায়নীজ স্টুডেন্ট থাকে তাই তাদের প্রসঙ্গে আগে লিখছি। তারা আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশীদের মতই ভাত খায়। সেই সংগে ন্যুডলস্, মাংস, সব্জী আর মাঝে মাঝে মাছ। তাদের রান্নার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। খাবার আমাদের মত অতটা সিদ্ধ করেনা। প্রথমে ফ্রাইংপ্যানে তেল খুব গরম করে তাতে ছোট করে কাটা মাংসের টুকরো ছেড়ে ভেজে নেয়। তাতে সামান্য পানি দিয়ে পাঁচ-ছয় মিনিট গরম করে নেয়। তারপর সেই গরম পানিতে সব্জি, লবন আর মিক্সড্ মশল্লার গুড়ো দিয়ে আরো পাঁচ মিনিট সিদ্ধ হলেই তাদের রান্না শেষ। তাদের সেই মিক্সড্ তরকারি ভাত দিয়ে কিংবা সেই গরম তরকারিতেই ন্যুডলস্ ছেড়ে স্যুপের মত করে খায়। আমি নিজের খাবার নিজেই রান্না করি বা কখনও ফ্রেন্ডস্রা মিলে একসাথে। মোটামুটি একই উপকরন দিয়ে যদি আমি/আমরা আর চায়নীজরা রান্না শুরু করি, তাহলে আমাদের রান্না অর্ধেক হতে হতে তারা খাওয়া শেষ করে থালা-বাসন ধুয়ে সব কমপ্লিট্। বাংলাদেশে যেসব চিয়নীজ হটেল আছে, সেগুলোর খাবারের থেকে এই খাবারের স্বাদ একেবারেই আলাদা। অরিজিনাল চায়নীজ খাবার। আমি তাদের খাবার খেয়ে দেখেছি, স্বাদ আমাদের থেকে সামান্য আলাদা হলেও খারাপ না। এককথায় সুস্বাদু।
এবার আসি জ্যামাইকান্দের খাবারের কথায়। তারাও প্রায় সবসময় ভাত খায়। প্লাস্ মাংস। আমি তাদেরকে খুব কম সময় মাছ খেতে দেখেছি। রান্না প্রায় আমাদের মতই। তবে খুব ঝাল খায়। মাঝে মাঝে তারা মাংসের সাথে সিদ্ধ আলু আর সিদ্ধ আটা/ময়দা খায়। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছি, তারা প্রথমে আটা/ময়দাকে পানি দিয়ে মাখিয়ে মন্ড তৈরী করে। আমরা রুটি বানানোর জন্য যেমনটি করি তেমন। তারপর হাত দিয়ে গোল গোল ছোটো টুকরো করে নেয়। সেই ছোটো টুকরোগুলোকে চ্যাপ্টা করে টগবগে গরম পানিতে ছেড়ে প্রায় একঘন্টা ধরে সিদ্ধ করে। তাদের কাছথেকে শুনেছি যে, এই খাবারে নাকি প্রচুর এনার্জি।
কলম্বিয়ানদের খাবারও প্রায় আমাদের মতই। ভাত আর মাংস। তবে তারা প্রায় সব তরকারীতেই লাল বা সাদা বীন (এক জাতীয় শিমের বিচী) ব্যাবহার করে।
এবার আসি আমার খাবারে। আমি “না ঘরকা না ঘাটকা”। ঐসব মিক্সড্ কালচারের খাবার দেখে আমি একধরনের মিক্সড্ খাবার তৈরী করি। যদিও ঐ খাবারের প্রায় অনেকটাই বাংলাদেশী খাবারের মত। মেন্যুতে আছে ভাত, মাংস, মাছ আর সব্জী। আর আমার সবচেয়ে খানদানী খাবার হলো আলুভর্তা আর ডিমভাজা। আলু ছোট কুচিকুচি করে কেটে, বেশী করে পেয়াজ আর কাঁচা মরিচ ফালি করে কেটে দিয়ে কেচ্কী মাছের চচ্চরি খেতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু এই রাশিয়াতে এখনও সেই সুযোগ আসেনি। হয়তো খুব শীঘ্রই আসবে। সেই সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম।
[বর্তমান আপডেটঃ সুযোগ এসেছে কিন্তু খুব কম। :)]
3 টি মন্তব্য:
পড়ে খুব ভালো লাগল । মানুষের খাদ্যাভ্যাস ! মজাদার বটে !
Tender And Consulting Opportunities in
Bangladesh
লেখাটা খুব ভাল হয়েছে...
অবাক কান্ড
strange story
যেখানে দুই মাসে সূর্যের দেখা মিলল মাত্র ১৫ মিনিট!
I love food! nice post .My Site
Post a Comment