29 June 2020

কম্বোডিয়া ভ্রমনঃ ঘুরে এলাম WAT PHNOM


কোভিড-১৯ এর আমলে ভ্রমন মানেই হ্যাঁপা। মহামারীর ভয়ে কোন দেশে ঢোকা বারন আবার একবার ঢুকলে বেরোনো আরো শক্ত। অনেকের কাছে কম্বোডিয়া ভ্রমনের তালিকায় একেবারে নীচের দিকের দেশ হলেও সম্প্রতি চীনের ‘রোডস এন্ড বেল্ট’ কর্মসূচীর আওতায় এখানের উন্নতি চোখে পরার মতো। অসংখ্য হাইরাইজ বিল্ডিং আর চীনা নাগরিকদের ভিড়ে সাদা চামড়ার পর্যটকদের আনাগোনাও প্রায় সবখানে। মূলতঃ ‘থাই’ আতিথিয়তায় হাপিয়ে কিছুটা জিড়িয়ে নিতেই তাদের কম্বোডিয়া আসা। তবে সম্পূর্ন বিদেশি অর্থ সহযোগীতা এবং বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে চলা অর্থনীতির এই দেশ কম্বোডিয়ায় বিদেশিদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অভিযোগ এবং প্রশ্ন তোলে অনেক বিদেশি পর্যটকরাই।






রাশিয়ার রাজধানী মস্কো যেমন মস্কোভা নদীর তীরে অবস্থিত তেমনি কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন ‘টনলে সাপ, মেকং এবং বাস্‌সাক’ এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এই শহর প্রতিষ্ঠার মুখে-মুখে প্রচলিত লৌকিক কাহিনী এইরকমঃ বুড়ি ‘পেন’(Penh) এই তিন নদীর মোহনার ঘাট থেকে একটি গাছ ভেসে যেতে দেখে। সে আরো দেখে যে, ঐ গাছের শেকড়/ডালে ছোট চারটি বুদ্ধের মূর্তি আটকে আছে। ঐ বুড়ি বৌদ্ধমূর্তিগুলি উদ্ধার করে একটি মাটির টিলার উপর প্রতিষ্ঠা করে এবং পূজা শুরু করে। এক পর্যায়ে ঐ মূর্তি ঘিরে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় এবং রাজ পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দিরের ব্যাপক উন্নতি হয়। বুড়ি ‘পেন’ এর নামে শহরের নাম হয় ‘নমপেন’। অনেক কাহিনীতে বুড়ি ‘পেন’কে ধনী বিধবা আবার কোথাও দাদী হিসেবে ডাকা করা হয়েছে।


 




গত সপ্তাহে বিকেলে হঠাৎ করেই আবারও দেখতে গেলাম সেই বুড়ি পেন এর প্রতিষ্ঠিত মন্দির ‘ওয়াট ফ্‌ন্‌ম’। বাংলা ভাষায় উচ্চারনগত জটিলতার কারনে Phnom Penh কে নমপেন বলা হলেও এখানে সবাই আমরা বলি ফ্‌ন্‌ম পেন। সেই কারনে মন্দিরের নাম Wat Phnom কে ওয়াট ফ্‌ন্‌ম - ই বলতে হবে। আর হ্যাঁ, খেমার/কম্বোডিয়ান ভাষায় Wat মানে প্যাগোডা (বৌদ্ধ মন্দির)। যে টিলার উপর মন্দির, তার চারপাশ ঘিরে সুন্দর গোল চত্বর, পার্ক এবং রাস্তা।






মেইন গেটে চোখে পড়ল সিকিউরিটির লোকজন এক নববিবাহিত চীনা দম্পতিকে প্যাগোডায় উঠতে নিরুৎসাহিত করছে। কাছে যেতে শোনা গেল তারা ভাঙ্গা-ভাঙ্গা ইংরেজীতে তাদের থেকেও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা ইংরেজীর কম্বোডিয়ান মন্দির সিকিউরিটির কাছে তাদের কম্বোডিয়া হানিমুন ট্রিপ এবং Wat Phnom ভিজিটিং প্ল্যান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। তবে এক পর্যায়ে কোভিড-১৯ এবং এর কারনে পর্যটকদের বিধিনিষেধ তাদের বোঝানো হলে তারা চলে যায়।






ঠিক কী কারনে জানিনা সিকিউরিটির লোকজন আমাকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত ১ ডলারের টিকিট কেটে মন্দিরে ওঠার অনুমতি দিলেও তাদের থ্যাংকস জানিয়ে সিঁড়ি দিয়ে অত উপরে ওঠা-নামার ঝামেলায় না যেয়ে সিদ্ধান্ত নেই শুধু নিচের পার্কেই সময় কাটানোর। আমার মূল আকর্ষনের কেন্দ্র ছিল পার্কের মাঠে রাজার মূর্তির সামনে অতি বিশালাকায় একটি ঘড়ি। পার্কে গিয়ে আমার মতোই ঘড়ি দেখতে উৎসাহী কিছু কম্বোডিয়ান ভ্রমনপিপাসুদের দেখলাম সেলফি তুলতে ব্যস্ত।





প্রায় এক বছরের উপর হলো প্রথমবার এসেছিলাম এই প্যাগোডা দেখতে। নমপেন’এর এই অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সেই সময় ছিল বিদেশি পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত। মাটি থেকে প্রায় ৮০ ফিটের বেশি উপরে টিলায় অবস্থিত এই প্যাগোডার বাহির এবং ভিতরের নিপুন হাতের কারুকাজ একবার হলেও চোখে দেখার মতো। তাই শারিরীক প্রতিবন্ধকতার তোয়াক্কা না করে সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় শরীরের শক্তির চেয়ে মনের উৎসাহই বেশি প্রাণশক্তি যুগিয়েছিল।





মূল মন্দির টিলার শীর্ষে অবস্থিত হলেও ঠিক মাঝামাঝি আরেকটি মন্দির অনেক পরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেটি মূলত এখানে বসবাসকারী এবং ভ্রমনরত চীনা নাগরিকদের আকর্ষন করতে। মজার ব্যাপার হলো চীনাদের টার্গেট করে বানানো এই মন্দিরে কম্বোডিয়ানদের উপচে পরা ভিড়। সচারচর চীন দেশের মন্দিরগুলোতে শান্তির দেবী কুওনাইন (হিন্দু ধর্মমতে - দেবী সরস্বতী) -এর পূজা করা হয়, কিন্তু Wat Phnom - এর এই চীনা মন্দিরে পূজা করা হয় চীনা পূরানের যুদ্ধবাজ দেবতাদের (Chinese Mythological Warlord)। খেয়াল করে দেখেছিলাম, মন্দিরে শান্তি বা যুদ্ধ যে দেব-দেবীর’ই পূজো করা হোক না কেন মূর্তির পায়ের কাছে রাখা সব দান বাক্সই ছিল টাকায় ভর্তি আর বড় নোটগুলি সবার সামনে সরাসরি চালান হয়ে যাচ্ছিল কাছে থাকা সেবায়েতদের পকেটে। আমি ঐ সময় আবারো উপলব্ধি করেছিলাম, প্রার্থনায় ভক্তের ভক্তিই প্রধান আর বাঁকী সব নিমিত্ত মাত্র।









ব্যস্ত শহরের মাঝে সবুজে ঘেরা সুন্দর এই পার্কে নতুন করে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সময় কিভাবে পার হয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত হলো টেরই পেলাম না। তবে নতুন করে স্মৃতিতে থেকে গেল আরো কিছু স্মরণীয় মূহুর্ত এবং ছবিতে।


0 টি মন্তব্য:

শেয়ার করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More